চৌধুরী হারুনুর রশীদ,রাঙামাটি প্রতিনিধি :
সমাজসেবা অধিদপ্তর ও সংস্থার গঠনতন্ত্র মতে কোন ধরনের নিয়মনীতি মানছে না, “ইসলামিক সেন্টার রাঙামাটি” ।সীমাহীন দুর্নীতি অনিয়মের অভিযোগের সুত্রে দৈনিক প্রত্যয় নিউজ প্রকাশের পর তোলপাড় । ২য় তলার মার্কেট নির্মান বন্ধ করা নিয়ে বিভিন্ন দপ্তরে প্রেরিত অভিযোগ থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে ।
রাঙামাটি জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তর নীতিমালা অনুসারে “ইসলামিক সেন্টার ” কার্যক্রম পরিচালিত না হওয়ায় সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে সাবেক ছাত্ররা লিখিত অভিযোগ । যেহেতু সমাজসেবা কর্তৃক নিবন্ধনকৃত সংস্থা যার রেজি নং০৪(৭৬৩)/৭৯ এই আইসিআর শপিংসেন্টার ২য় তলা মার্কেট নিমার্ণে ও দোকান বরাদ্ধে কোন ধরনের দরপত্র আহবান করা হয়নি। একেক দোকানের বিপরীতে ৮/১০ লক্ষ টাকা অগ্রিম গ্রহন করে । এসকল কার্যক্রম পরিচালনা করছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী রাঙামাটির নেতাকর্মীরা। এই কারণে মুলত:অভিযোগের সুত্রপাত সাবেক ছাত্র ,ইসলামিক সেন্টার সদস্য ও এলাকাবাসী।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানাগেছে,আল-আমিন মাদ্রাসা ,এতিম খানা ও ইসলামিক সেন্টার রাঙামাটি এক সময়ে বনরুপা মসজিদে পরিচালনা করতেন মাওলানা আবুল খায়ের । সেই সময়ে বনরুপা মসজিদের সামনে ২য় তলা একটি ভবনে ইসলামিক সেন্টার ও আল-আমিন মাদ্রাসা পরিচালিত হয়েছে। সেই সময় ইসলামিক সেন্টার সদস্য স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা জামায়াতেসহ বিভিন্ন দলমত সকলে সদস্য ছিলেন।
পরবর্তীতে মরহুম এএসএম শহিদুলাহ ইসলামিক সেন্টার চেয়ারম্যান থাকাকালিন সময়ে আল-আমিন মাদ্রাসা ,এতিমখানা,ইসলামিক সেন্টার নামে পৃথক পৃথক বন্দোবন্তি করেন। দশ শতক করে প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ৮১/৮২ রের্কড করা হয় । মুজাদ্দেদী-আল-ফেসানী একাডেমী জায়গাটি রাঙামাটি রানী দয়াময়ী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ক্রয় করেন ইসলামিক সেন্টার তৎকালিন চেয়ারম্যান মরহুম এএসএম শহিদুল্লাহ। সেই সময় বনরুপা মসজিদ থেকে পৃথক হওয়ার জন্য স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিতিতে প্রতিবেদকসহ পরিমাপ করে সীমানা প্রাচীর প্রদান করেন ইসলামিক সেন্টার। শুরুতে মসজিদের সামনে এক সময়ে প্রথম ভবনটি (ইসলামিক সেন্টার ও আল-আমিন মাদ্রাসা) মসজিদের নিকট তৎকালিন সময়ে ৮০ (আশি) হাজার টাকায় হস্তান্তর করেন বলে জানাগেছে।
এদিকে আল-আমিন মাদ্রাসা টিনসেট সেমিপাকা নিয়মিত ক্লাস চলাকালিন সময়ে স্থানীয় সরকার পরিষদ নির্বাচিত সদস্য এএসএম শহিদুল্লাহ পরিষদ থেকে ২য় তলা ভবন নিমার্ণ করেন ।বর্তমান সেই বিল্ডিং এ আল-আমিন মাদ্রাসা ক্লাস কার্যক্রম চলে আসছে। আল-আমিন মাদ্রাসার সেমিফাকা টিনসেট ছাত্র ও শিক্ষক ও ছাত্রাবাস ছিল। সেই সময় বনরুপা মসজিদের মাটি কেটে মাদ্রাসা জায়গা দিয়ে মাটি নিতে নিষেধ করলে উভয়ের মধ্যে মৃদু কথা কাটাকাটি হয় । পরে মসজিদ কমিটি মাদ্রাসায় আরো রেকডীয় জায়গার অতিরিক্ত দখলে রাখা ভুমির প্রাপ্যতা দাবী করে আদালতে মামলা করেন ।
মামলায় নিম্ম আদালতে মসজিদ কমিটির অনুকুলে রায় এর প্রেক্ষিতে ইসলামিক সেন্টার বর্তমান কমিটি জায়গাটি ছেড়ে দেওয়ার জন্য সম্মতি হয়। ইসলামিক সেন্টার এর দুর্বলতার কারনে সরকারি দপ্তরে আল-আমিন মাদ্রাসার মুল জায়গায় টেন্ডারকৃত ২য় তলা ভবনের কাজ বন্ধ করে পুর্বের সীমানা প্রাচীর ভেঙ্গে আল-আমিন মাদ্রাসার জায়গাটি ছেড়ে দেয়া হয় বলে জানাগেছে । তবে মসজিদের পানি চলাচলের ড্রেনের পর জায়গাটি সম্পুর্ণ উম্মুক্ত রাখা হয়েছে- কোন ধরনের স্থাপনা দেখা যায়নি। প্রতিবেদক পেশাগত ও ব্যবসায়িক এবং সামাজিক সংগঠনে দীর্ঘদিন ধরে জড়িত থাকায় এসব প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ বিষয়ে অবগত রয়েছে।
ইসলামিক সেন্টার প্রাক্তন সুযোগ্য চেয়ারম্যান হাজী এএসএম শহিদুল্লাহ মৃত্যুর পর নতুন করে কোন প্রতিষ্ঠান ও সরকারী উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানের নির্মাণ কাজ গড়ে উঠেনি বলে সংশ্লিষ্ট অনেক সদস্যরা জানিয়েছে। ইসলামিক সেন্টার ইসি মার্কেটের অর্থায়নে আল-আমিন মাদ্রাসা ও এতিম খানা দীর্ঘদিন পরিচালিত হয়ে আসছে । এতিম খানার পিছনে কয়েকবছর আগে পাহাড় কাটতে গিয়ে মাটি চাপা পড়ে কায়কোবাদ নামে এক শিক্ষার্থী ঘটনাস্থলে নিহত হয়। নিহত কায়কোবাদের মা এখনো রাঙামাটি শহরে তবলছড়িতে বসবাস করে ।
বর্তমানে আল-আমিন এতিম খানার খায় খরচ বহন করে কুয়েত রিলিফ ফান্ডের অর্থায়নে । দীর্ঘবছর ধরে আল-আমিন মাদ্রাসার মাঠসহ একাংশ পাহাড় কেটে মাটি ভরাট করতে দেখাগেছে এতিমখানার ছাত্ররা । ১৯৮১/৮২ সালে তিনটি প্রতিষ্ঠানের নামে পৃথক পৃথক ৩০ শতক ভুমি রের্কড ও নামজারী করেন তৎকালিন চেয়ারম্যান এএসএম শহিদুল্লাহ ।
“ইসলামিক সেন্টার ২য় তলার মার্কেট নিমার্ণ করতে গিয়ে নিয়ম নীতি না মানায় এসব অভিযোগ উঠেছে বলে জানিয়েছে অনেক ইসলামিক সেন্টার অনেক সদস্য। আইসিআর শপিংসেন্টার রোড লেবেল ২য় তলা মার্কেট এর রোড লেবেল ৩য় ও চার তলা নিমার্ণের ছাদ ঢালাই কাজ চলিতেছে। এত দ্রুত নিমার্ণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে সকলের নজরে আসছে বিষয়টি । এসব কাজ তদারকি ও মনিটরিং দোকান বরাদ্দ সব বিষয়ে দেখ ভাল করেছে রাঙামাটি জামায়াতের লোকজন। অডিট রিপোর্ট কাগজপত্র সব কিন্ত কৌশলগত কারনে স্বচ্ছতা রেখেছে ।
বনরুপা মসজিদ কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব চৌধুরী বলেন,ইসলামিক সেন্টারের স্থায়ী বন্ধোবস্তিকৃত জায়গার অতিরিক্ত দখলে থাকা মসজিদের প্রায় সাত শতক জায়গা বিএম-০১ শপিং কমপ্লেক্স এর পিছনে ছেড়ে দিবে । এবং তা মসজিদের নামে সীমানা চিহ্নিত করে খতিয়ান ভুক্ত করা হবে ।
সাবেক আল-আমিন এতিমখানার শিক্ষার্থী ছগির আহম্মেদ ,বনরুপা,রাঙামাটি। ছগির আহম্মেদ স্বাক্ষরিত অভিযোগের অনুলিপি প্রসঙ্গে সত্যতা স্বীকার করে বলেন,ইসলামিক সেন্টার সকল কার্যক্রম জামায়াতের লোকজন দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে । জামায়াতের শুরার সদস্য বা রোকন হলে তাদেরকে ইসলামিক সেন্টার নতুন সদস্য করা হচ্ছে। ১/০২/২০১৯ তারিখে ১২৭ জন ইসলামিক সেন্টার সদস্য ছিল । মাওলানা আবদুল খালেক সওদাগর ও আল-আমিন মাদ্রাসার অফিস সহকারীসহ জামায়াতের একদিক ব্যক্তিকে ইসলামিক সেন্টার সদস্য করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এসব কৌশলের পর ১২/০২/২০১৯ইং তফসীল ঘোষনা ২/৩/২০১৯ নির্বাচন করে- জেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তা ২১ সদস্য বিশিষ্ট কার্যকারী কমিটি ঘোষনা করেন।
ইসলামিক সেন্টার রাঙামাটির সাধারণ সম্পাদক কাজী ইউছুফ মুঠোফোন রিসিভ করে এই বিষয়ে আমি কিছু জানি না । পরে প্রতিবেদক প্রশ্ন করলে ৫মিনিট পরে ফোন দিবে বলে বার বার ফোন কেটে দেন।
জেলা সমাজসেবার এডি বিশ্বজিত চাকমা বলেন-ইসলামিক সেন্টার রাঙামাটি পরিচালনা কমিটি গঠনতন্ত্রের বহিভুত কার্যক্রম করে আসছে । ১৯৬১ সালের সমাজসেবা নিবন্ধন নিয়ন্ত্রন আইনে স্পষ্ট বলা আছে –নিধিারিত সময়ের পর কমিটি মেয়াদ শেষে সাধারণ সদস্য ব্যতীত ইসলামিক সেন্টার পরিচালনা কমিটি কোন বৈধতা নেই ।
জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তর উপ-পরিচালক ওমর ফারুক জানায়- অভিযোগটি সমাজ সেবায় প্রেরণ আমরা পাইনি। তবে ইসলামিক সেন্টার নামে আমরা ৫/৬ লক্ষাধিক টাকা প্রতিবছর বরাদ্দ দিয়ে আসছি । তবে আমরা সরেজমিনে পরির্দশনে যাব ।
সদ্য যোগদানকৃত রাঙামাটি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক মো.মামুন বলেন,অভিযোগ আসছে- তাং ০৯/০৯/২০২০ইং জেলা প্রশাসনের ডকেট নং-২৬৮ আমি নতুন যোগদান করেছি ৮অক্টোবর ২০২০ইং। অভিযোগের কার্যকর সর্ম্পকে জানতে হলে তথ্য অধিকার আইনে ‘ক’ ফরমে আবেদন করতে পারেন।
##
চৌধুরী হারুনুর রশীদ,রাঙামাটি।